কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় চলতি অর্থ বছরের ১ম ও ২য় পর্যায়ের টিআর কাবিখা ও কাবিটার ৯৫ প্রকল্পের বিপরীতে ২১৬ টন খাদ্য শষ্য ও কাবিটার নগদ ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প কমিটির লোকজন পিআইওর নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গঠন করে টিআর ও কাবিখার চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে প্রকল্প যেনতেনভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর কাবিটার প্রকল্পে ২৯ লাখ টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোন কাজ হয়নি। চলতি অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে গ্রামীন অবকাটামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের অধীনে বরাদ্দকৃত ৭৯ প্রকল্পের ২১৬ টন টিআর কাবিখার চাল ও গম কালোবাজারে বিক্রি বিক্রি করে প্রকল্প কমিটির লোকজনের কাছ থেকে পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশ একাই হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। আর কাবিটার ১৬ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। গত কয়েকদিন পূর্বে পিআইওর এহেন দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যের খবর এলাকায় চাউর হলে সর্বত্রে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা পেকুয়ার পিআইওর এহেন ঘুষ বানিজ্যের ঘটনায় দ্রুত উর্দ্ধতন র্কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ সরকারী তদন্ত দাবী করেছেন। জানা গেছে, গত এক মাস পূর্বে কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে তাকে পেকুয়া বদলী করেন। আর পেকুয়ায় যোগদান করেই সৌভ্রাত দাশ শুরু করেন নানান অনিয়ম দূর্নীতি ও বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য। কুতুবদিয়ার বিভিন্ন কর্মসৃজন প্রকল্প, টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পিআইও সৌভ্রাত দাশের বিরুদ্ধে। কুতুবদিয়া পিআইও অফিসের সহকারী মো. শামশুল আলম জানান, পিআইও সৌভ্রাত দাশ কুতুবদিয়ায় কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অনিয়ম দূর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন। যাহা সরেজমিনে তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে বলে ওই সরকারী কর্মচারী দাবী করেছেন। তিনি আরো বলেন, গত তিন মাস পূর্বে পিআইও সৌভ্রাত দাশের দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে মারধরও করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি ১৫-১৬ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে পেকুয়া উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ টিআর প্রকল্পের আওতায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নে টিআরের ১৫ প্রকল্পের বিপরীতে ৪৪ টন চাল, টইটং ইউনিয়নে ৭ প্রকল্পের বিপরীতে ৮টন, রাজাখালী ইউনিয়নে ৬ প্রকল্পের বিপরীতে ৯টন, মগনামা ইউনিয়নে ৮প্রকল্পের বিপরীতে ৮টন, শিলখালী ইউনিয়নে ১১প্রকল্পের বিপরীতে ১২টন, বারবাকিয়া ইউনিয়নে ৯ প্রকল্পের বিপরীতে ১২ টন ও উজানটিয়া ইউনিয়নের ৭প্রকল্পের বিপরীতে ৭টনসহ সর্বমোর্ট ১০০ টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেন। গত মাসের জানুয়ারীর মধ্যেই ওই সব খাদ্য শষ্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির লোকজন পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্রও উত্তোলন করে নিয়েছেন। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী (কাবিখার) আওতায় পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৮টি প্রকল্পে বিরীতে ৬৪টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেন।
এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ওয়াশিকা আয়শা খান ও চলতি অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে টিআরের ৫প্রকল্পের বিপরীতে ২৫টন খাদ্য শষ্য, কাবিখার ৩ প্রকল্পের বিপরীতে আরো ২৭টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটি গত জানুয়ারী মাসের মধ্যেই পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড় পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে নিয়েছেন।
অপরদিকে একই অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ে কাবিটার ১৬ প্রকল্পে ২৯ লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ দেওয়াহয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মগখাল খনন দ্বারা উন্নয়ন, গোদারপাড়া জামে মসজিদে সোলার স্থাপন দ্বারা উন্নয়ন ও আহম ডিলার চৌমুহুনী জামে মসজিদে সোলার দ্বারা উন্নয়নে ১৪লাখ ৬০ হাজার টাকা। পেকুয়া উপজেলার টইটং বাজার, হাজী বাজার, বন কানন এশাতুল উলুম মাদ্রসার উন্নয়ন, পূর্ব বটতলী, আলিমার ঝিরি নতুন জামে মসজিদে সোলার দ্বার উন্নয়নের জন্য ২লাখ ৩৩হাজার টাকা, মগনামা ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্টান ও মসজিদে সোলার দ্বার উন্নয়নের জন্য ৪লাখ ২০ হাজার টাকা, শিলখালী মোবারেকা এভিনিউসহ আরো দুইটি প্রকল্পে ২লাখ ৩৩ হাজার ৫’শ টাকা, রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদ ও প্রতিষ্টানে সোলার দ্বারা উন্নয়নের জন্য ৩লাখ টাকা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা গ্রামের ৫টি প্রকল্পে ২লাখ ৭১ হাজার ৭৭টাকাসহ টিআরের আরো ১০টি প্রকল্পে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৭টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, এসব প্রকল্প কমিটির লোকজনের কাছ থেকে পিঅ্ও সৌভ্রাত দাশ প্রতি লাখে ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়েছেন। এভাবে ১৬ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দের অর্থ থেকে পিআইও একাই হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প কমিটির লোকজন পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্র নিয়ে ১ম পর্যায়ের টিআরের চাল চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে চকরিয়া কয়েকজন চাল পাচারকারী ডিলারের কাছে পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। সরকারী নিয়ম হচ্ছে, কাবিখা প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজের বিনিময়ে সরাসরি খাদ্য শষ্য দিতে হবে। পেকুয়ার কোন প্রকল্পেই শ্রমিকরা খাদ্য শষ্য পাইনি। ওই সব প্রকল্পের খাদ্য শষ্য কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটিগুলো নয়ছয় প্রকল্পগুলো যেনতেনভাবে বাস্তবায়ন করেছেন।
সরেজমিনে পেকুয়ার বিভিন্ন প্রকল্পে পরিদর্শন করে প্রকল্প কমিটির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশ প্রতিটি প্রকল্পের লোকজনের কাছ থেকে প্রতিটনের বিররীতে ‘অফিস খরচের’ কথা বলে দুই হাজার দুইশত টাকা করে ঘুষ আদায় করেছেন। চকরিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাও প্রতি টনের বিপরীতে পাচশত টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।
টইটং ইউনিয়নের একটি কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্য সচিব জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের অনূকূলে একটি সড়ক ও মসজিদে সৌর বিদ্যুদ স্থাপনের জন্য ৮টন চাল বরাদ্দ দেন। গত জানুয়ারীর মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। ৮ টন চালের বরাদ্দের ছাড়পত্র নেওয়ার সময় পেকুয়ার পিআইও প্রতিটন থেকে দুই হাজার দুই শত টাকা করে তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
শিলখালী ইউনিয়নের একটি কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি অভিযোগ করেছেন, তার অনূকূলে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাস্তা সংস্কারের জন্য ৮টন চাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বরাদ্দের ছাড়পত্র (ডিও) নেওয়ার সময় পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত প্রতিটন থেকে দুই হাজার দুইশত টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।
এভাবে পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশ পেকুয়া উপজেলার টিআর, কাবিখা ্র কাবিটার ৯৫ প্রকল্পের ২১৬ টন খাদ্য শষ্যে ও ২৯ লক্ষাধিট টাকা বরাদ্দের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে চালে প্রতিটন দুই হাজার দুই শত টাকা করে ৪লাখ ৭৫হাজার দুইশত টাকা আর কাবিটার নগদ টাকায় প্রতি লাখে ১৫ হাজার টাকা করে সর্বমোটা ১০ লক্ষাধিট ঘুষ নিয়েছেন। যা উর্দ্ধতন কর্তূপক্ষ সরেজমিনে পেকুয়ার টিআর ও কাবিখা প্রকল্প সরেজমিনে তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোন প্রকল্প থেকে তিনি ঘুষ নেননি। এসব তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার। তিনি এ প্রতিবেদককে হুংকার দিয়ে আরো জানান, আমার বিরুদ্ধে যতই লিখুন কেউ কিছুই করতে পারবেনা। এর পূর্বেও আমার বিরুদ্ধে অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কই আমার তো কিছুই হয়নি। আমার জায়গায় আমি আছি!
এদিকে পেকুয়ার ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ পিআইও সৌভাত দাশের বিরুদ্ধে দূর্নীতি প্রতিরাধ আইমে মামলা ও ত্রাণমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন পেকুয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবুল। তিনি বলেন, দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর কোন কর্মকর্তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, পেকুয়ার টিআর ও কাবিখা প্রকল্প থেকে পিআইওর ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্ত ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: